৭৩।
একটু বেশিক্ষণ ঘুমাতে চাইলেও হলো না। সারে এগারোটায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। উঠে নামাজ পড়ে রাতে ভিজিয়ে রাখা কাপর গুলি ধুয়ে শুকাতে দিয়ে রুমে এসে বসলেন। আজ বাসায় ফোন করতে হবে। মনি পৌঁছার পরে মনির সাথে কথা বলার সুযোগ হয়নি। ঘড়িতে প্রায় একটা বেজে গেছে। আর দেরি না করে কার্ডটা নিয়ে ফোনের কাছে গেলেন। ওপাশে রিং হচ্ছে মনির কণ্ঠ-
-হ্যালো,
-হ্যাঁ আমি, কেমন আছ তোমরা?
-এ কয়দিন ফোন করনি কেন? এখানে ভালো আছি সবাই তুমি কেমন আছ?
-আমিও ভালো, সেদিন যেতে পেরেছিলে ঠিক মত?
-তোমার কাজ কেমন চলছে কি অবস্থা খাওয়া দাওয়া কেমন? কেমন লাগছে কি কাজ করতে হয় পারো কিনা?
এক নিশ্বাসে সব প্রশ্ন করে একটু থামল।
-তোমার এতো প্রশ্নের জবাব দিতে সময় লাগবে তার চেয়ে আমি এখন লাইবেরিতে যাবো ওখান থেকে মেইলে সব কিছু লিখে পাঠাবো দেখে নিও এবারে বল তুমি কেমন করে গেলে রাস্তায় কি কোন অসুবিধা হয়েছিলো কায়সার বেয়াই সাহায্য করেছে?
-কায়সার বেয়াই নাকি তোমাকে এয়ারপোর্টে দাঁড়াতে বলেছিলো?
-কই না তো আমিতো তেমন কিছু শুনিনি আমিতো তাকে বলেই আসলাম বেয়াই আমি চললাম আমাকে অক্সফোর্ড যেতে হবে।
-না সেতো বললো আমি চেক ইন করতে যাবার আগে বেয়াইকে বলে গেলাম একটু দাঁড়ান আমি এসে খুঁজে আর তাকে পাইনা উনি নেই চলে গেছে আমাকে একটু বলে গেলে কি হোত। মনে হয় সেই রাগে সারা পথে আমার সাথে একটা কথাও বলেনি এমনকি কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টেও হোটেল নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো সেখানেও কোন সাহায্য করেনি তারটা সেরে দূরে গিয়ে বসে ছিলো আমি কাছে গিয়ে বলতে চাইলাম সে অন্য দিকে ঘুরে বসলো এদিকে আমি কিছু বুঝাতে পারছিনা কি একটা বিপদ পড়েছিলাম। হিথরোতে ওই যে তাল তলার যে লোকটাকে পরিচয় করে দিয়েছিলে সে তো এক বদমাইশ, বলে কিনা চলেন ভাবী আমরা হোটেলে এক রুমেই থাকতে পারি। আমি বললাম হ্যাঁ তাইতো, তাই হবে একটু অপেক্ষা করেন। আবার কিউতে দাঁড়ালাম হঠাৎ এক বাঙ্গালি ভাইকে পেলাম ওখানেই ক্লিনারের কাজ করে, হাতে ব্রাশ ট্রলি নিয়ে পাশে দিয়ে যাচ্ছিলো তাকে বললাম ভাই আমার হোটেলের ব্যাপারটা একটু ঠিক করে দেন, আমার সাথে কেও নেই, ওরা কি বলছে আমিতো কিছু বুঝি না আমার কথাও মনে হয় ওরা বুঝে না। তখন ওই লোক কাউন্টারে গিয়ে ওদের ভাষায় কি কি সব বলে দেয় তারপরে ওরা আমার ব্যবস্থা করে। উনি বললো আপনি এই লোকের সাথে যান বলে এক লোকের সামনে নিয়ে গেলো। আমাকে দেখে বললো আমি তোমাকে হোটেলে পৌঁছে দিব চিন্তা করবেনা। ইনি হোটেলে পৌঁছে দিবে আর ওখান থেকে ভোর চারটায় তুলে আনবে এখন এখানে বাজে রাত বারোটা আপনার ঘড়ি মিলিয়ে নেন। আমি বলেছি আপনার সাথে কেও নেই তাই আপনার সাথে আর কথা বলবে না আপনাকে হোটেলের রুমে পৌঁছে দিয়ে আসবে আপনি শুধু ভোরে সময়মত রেডি হয়ে থাকবেন যাতে করে এদের লোক হোটেলে গিয়ে আপনাকে ডাকলেই পায়। যাইহোক তখনকার মত তো বের হয়ে মাইক্রো বাসে উঠলাম সাথে আরও কয়েকজন ছিলো দশ পনেরো মিনিটের মধ্যে একটা হোটেলে পৌঁছে হোটেলের রিসিপশনের সামনে নিয়ে গেলো ওখানে পাসপোর্ট রেখে একটা রেজিস্টারে সই নিয়ে বয়ের হাতে একটা চাবি দিয়ে আমাকে ওর সাথে যেতে বললো । শেষ পর্যন্ত এই বয় আমাকে এনে রুমে দিয়ে গেলো। ঢুকেই দরজা বন্ধ করে কাপর বদলে হাত মুখ ধুয়ে বসে রইলাম তখন প্রায় একটা বাজে। ওরা আমার সাথে এই গাড়িতে আসেনি মনে হয় ওদের অন্য হোটেলে পড়েছিলো অনেক প্যাসেঞ্জার তো। যাইহোক ভাগ্য ভালো বলতে হবে প্লেন থেকে নামার আগে খাবার দিয়েছিলো ক্ষুধা টুধা লাগেনি। রুমে টিভি ছিলো তাই চালিয়ে বসে রইলাম। সারারাত বিছানায় শুইনি একা একা ভয় করছিলো।
এভাবেই রাত কেটে গেলো। চারটার আগেই উঠে রুমের মধ্যেই একটু হাঁটা হাঁটি করলাম চারটা বাজার দশ মিনিট আগেই ফোন, মনে হয় ইন্টার কম বেজে উঠলে ধরলাম রিসিপশনিস্ট বললো নিচে যেতে। ব্যাগটা নিয়ে রিসিপশনিস্টের সামনে দাঁড়িয়ে নাম বললাম পাসপোর্ট বের করে দিল। এখন দেখি এয়ারলাইনের অন্য লোক, ইউনিফরম দেখে চিনলাম রিসিপশনিস্ট মেয়েটাও দেখিয়ে দিলো, মেয়েটা বেশ ভালো তোমার খুকুর মত হ্যাংলা লম্বা মালয়েশিয়ান। যাই হোক গাড়িতে উঠলাম, এয়ারপোর্টে নামলাম ড্রাইভারই বলে দিল সাথের লোকজনের সাথে যেতে। ওদের সাথে এসে লাউঞ্জে বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই চেক ইন হলো। তারপর প্লেনে বসে সারা পথ যা ভেবেছি ঢাকা নেমে কি করবো, এখানেও কায়সার সেই একই ব্যাবহার। যাই হোক এখন কি আর করবো, বললাম বেয়াই আপনি কিভাবে যাবেন?
-আমি ট্যাক্সি নিব।
-তাহলে আমাকে কল্যাণপুরে নামিয়ে দিবেন?
– না তা পারবো না আপনি এক কাজ করতে পারেন আমার সাথে চলেন ওখানে আমি বাসায় নেমে গেলে ওই ট্যাক্সিতেই আপনি যেতে পারেন।
আর কি করি নিজের শহরে পৌঁছেছি, এখন আর ভয় নেই তাই মেনে নিয়ে তার সাথে উঠলাম। এই যে আজিমপুর পর্যন্ত আসলাম সারা রাস্তায় একটা কথাও না এমনকি লাগেজটা ধরে উঠাতেও একটু সাহায্য করেনি। উনি আজিমপুর পর্যন্ত ভাড়া দিয়ে তার বাসায় নেমে গেলো, যাবার সময় কিচ্ছু বলে গেল না। আমি ট্যাক্সির ড্রাইভারকে বললাম ভাই আমাকে একটু কল্যাণপুর বাস ডিপোর সামনে নামিয়ে দিবেন, ড্রাইভারটা ভালো ছিলো সে আর কোন কথা বললো না এসে জিজ্ঞেস করলো এয়ারপোর্টে আপনার কেও যায় নাই?
-না আমিতো হঠাৎ করে এসেছি তাই কাউকে জানাতে পারিনি।
-বাসা কোথায় যেতে পারবেন না কি দিয়ে আসব?
-না না এইতো কাছেই বাসা আপনি যেতে পারবেন না কষ্ট হবে চাপা রাস্তা আমি একটা রিকশা নিয়ে যেতে পারবো।
লোকটা রাস্তার মুখে ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে একটা রিকশা ডেকে বললো ম্যাডামকে নিয়ে যাও এই যে লাগেজটা উঠাও। আমি অবাক হয়ে গেলাম ড্রাইভারের কাণ্ড দেখে আমাদের বেয়াইর চেয়ে লক্ষ গুনে ভালো মানুষ এই লোক। ভাড়া যা এসেছে তার সাথে আমি বিশটা টাকা বেশি দিলাম খুশি হয়ে সালাম দিয়ে চলে গেলো।
বাসায় এসে শুনি শাহেদ এয়ারপোর্টে গেছে। কতক্ষণ পরে ও এসেই হৈ চৈ একা চলে এলাম বলে। বাসায় এসেই মনে হলো আজ বুঝি আমার পুনর্জন্ম হলো আমি যে এপর্যন্ত পৌঁছতে পারব আশা করিনি সারাটা পথ কি টেনশনে গেছে। একে তো তোমার চিন্তা কোথায় গেলে কিভাবে গেলে কি করছ তারপরে নিজে কি করবো সাথে তো দুইটা অমানুষ রয়েছে ওই দুইটা যদি মানুষ হোত তাহলে আমার এতো কষ্ট হোত না। যাক আল্লাহর কাছে হাজার শোকর সহি সালামতে পৌঁছেছি। বাসায় ঢোকার সাথে সাথেই তিন মেয়ে এক সাথে এইযে জড়িয়ে ধরলো আর ছাড়ে না।
এই পর্যন্ত এক নিশ্বাসে বলে মনি থামলো।
-তোমাকে বলে দিয়েছিলাম ঢাকায় নেমে বাসায় ফোন করবে যাইহোক যা হবার হয়ে গেছে। আচ্ছা মনি শোন প্রায় আধা ঘণ্টা হয়েছে লাইনে আছি আমার কার্ড প্রায় শেষ। এখন রাখি আজ আমার ছুটি এখন লাইবেরিতে যাচ্ছি ওখান থেকে আমি আমার কথা মেইলে পাঠাচ্ছি তুমি দেখে নিও।
loading...
loading...
শুভেচ্ছা প্রিয় বন্ধু। সালাম।
loading...